দেশের সব মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকার আজ সারা দেশে এক কোটি ডোজ টিকার দেওয়া লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। টিকা দিতে লাগছে না কোনো নিবন্ধন। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন না থাকলেও টিকা দেওয়া যাচ্ছে। সেজন্য টিকার প্রথম ডোজ নিতে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে।
কোনো রকম পূর্ব নির্ধারণ নিবন্ধন ছাড়াই জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ হলেই দেওয়া হচ্ছে করোনা টিকা। তবে এই টিকা পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতাল ও মেরুল বাড্ডার অস্থায়ী কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্র দুটিতে সকাল থেকে নারী-পুরুষ আলাদা লাইনে টিকা নিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন। বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দুটি কেন্দ্রেই টিকা প্রত্যাশীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন।
ক্যান্সার হাসপাতালে টিকা দিতে আসা রোকেয়া আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক-দেড় ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো দেরিতে টিকা দিচ্ছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, আমার বয়স ২১, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাই টিকা নিতে পারিনি। এখন সরকার সুযোগ দিয়েছে। তাই টিকা দিতে এসেছি।
কেন্দ্রটিতে টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা আলমগীর কবির আশিক জানান, অন্যদিনের তুলনায় আজকে টিকা গ্রহণকারীদের ভিড় অনেক বেশি। সকাল থেকে টিকা দিচ্ছে কিন্তু লাইন কমছে না।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে বুস্টার ডোজ, কিংবা সেকেন্ড ডোজের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে। আর গণটিকা উপলক্ষে নতুন করে এখানের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও এতো চাপ কমছে না।
একই অবস্থা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অস্থায়ী কেন্দ্রেও। মেরুল বাড্ডা অবস্থিত কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করা আহনাফ মিয়া দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, এখানে সকাল থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে। এখানে যারা আসছেন তাদের টিকা দিয়ে দিচ্ছি।
টিকার জন্য অপেক্ষা করা রাশিদা আক্তার নামে এক নারী জানান, সকাল সাড়ে দশটায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন বেলা সাড়ে ১১টা, আরও ঘণ্টা খানেক সময় লেগে যাবে টিকা পেতে।
মনির মিয়া দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, শুনেছি আজকের পর আর করোনা টিকা দেওয়া হবে না। তাই টিকা দিতে এসেছি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে চলমান টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।
তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ‘একদিনে এক কোটি’ করোনা টিকা ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে প্রথম ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হবে। এরপরে দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। যারা এখনও নেননি আজই নিকটস্থ কেন্দ্র থেকে ভ্যাক্সিন নিন, সুরক্ষিত থাকুন।
অন্যদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হবে না। তবে প্রথম ডোজের চেয়ে দ্বিতীয় ও বুস্টার (তৃতীয়) ডোজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন শুরু হয় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ বছর বয়সী যেকোনো মানুষ এখন টিকা নিতে পারছেন। দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজার— এই চার ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে।